কড়া নিরাপত্তা বলয় ডিঙিয়ে বলিউড সুপারস্টার সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনা হতবাক করেছে সবাইকে। চলতি মাসের ১৫ তারিখে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার মতো অভিজাত এলাকায় ‘ছোট নবাব’-এর ওপর এ হামলার খবরে উদ্বিগ্ন পুরো চলচ্চিত্রজগৎ ও তার ভক্তরা।
বড় তারকা দম্পতির বাড়িতেই এ হামলা মুম্বাইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় অভিনেতাকে দ্রুত কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এখন বিপদমুক্ত। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া অস্ত্রোপচারে অভিনেতার শরীর থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে ধারালো অস্ত্রের অংশবিশেষ। কে এবং কী কারণে এ হামলা চালিয়েছে– সে প্রশ্ন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে সাইফের ওপর এমন অতর্কিত হামলার সূত্র ধরে পুলিশ প্রশাসন বলিউড খানদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি আলাদাভাবে তুলে এনেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে, সাইফ আলি খানের ওপর অতর্কিত হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে আক্রমণকারীকে ধরে ফেলেছে মুম্বাই পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর তদন্ত করতে গিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা চমকে দিয়েছে সবাইকে। তদন্তকারীদের বরাত থেকে জানা গেছে, শুধু সাইফ নন, দুর্বৃত্তের নিশানায় ছিল শাহরুখ খানের বাড়িও। সাইফের বাড়িতে হামলা করার দু’দিন আগেই নাকি বান্দ্রায় বলিউড বাদশাহ শাহরুখের বাড়ি মান্নাতেও হানা দিয়েছে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি। বাড়ির অন্দরে প্রবেশ না করলেও বাইরে থেকে চারপাশ দেখে এসেছিল সেই ব্যক্তি।
মনে করা হচ্ছে, সাইফের দুষ্কৃতই মান্নাতের চারপাশ রেকি করতে পৌঁছেছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শাহরুখের বাড়িতেও মুম্বাই পুলিশের একটি দল গেছে।
জানা যায়, ঘটনার দু’দিন আগেই মান্নাতের সামনে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। সে ৬ থেকে ৮ ফুটের একটি লোহার মই বেয়ে মান্নাতে প্রবেশ করার চেষ্টাও করে।
তদন্তকারীদের কাছ থেকে পাওয়া এ তথ্য কতটা সঠিক, তা এখন সময়ই বলে দেবে। সাইফকাণ্ড ঘিরে যে বিষয় জনমনে সন্দেহ বাড়াচ্ছে, তা হলো আক্রমণকারীদের টার্গেট ‘খান’ তারকারা। কারণ, একটু পেছনের ঘটনাগুলোয় নজর দিলে এ সন্দেহ প্রকট হয়ে ওঠে।
ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের পর থেকে হিন্দুত্ববাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। গোঁড়া হিন্দু অনেকে নানা বিষয়ে মুসলমানদের হেনস্তা এবং তাদের সন্ত্রাসবাদী ও দেশদ্রোহী বলতেও দ্বিধা করেনি।
এমনকি যে অভিনেতা কখনও ধর্মীয় কোনো বিষয়ে কোনো ধরেনর কটু কথা বলেননি, সেই আমির খানও রেহাই পাননি। সামাজিক অসংগতি নিয়ে নির্মিত টিভি সিরিজ ‘সত্যমেব জয়তে’র শুটিংয়ের সময় হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল আমির খানকে। সে কারণেই এ অভিনেতা তাই নিজের সুরক্ষার জন্য বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ কিনতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, নিজ দেশে তিনি আর নিরাপদ নন। শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা না পেলে দেশ ছাড়ার কথাও বলেছিলেন; যা নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও নানা ঘটনা ডামাডোলে সেই বিতর্ক কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। নিজ মন্তব্যের জেরে আমিরের শত্রু বনে গিয়েছিলেন যারা, তারা যে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন, এটি মনে করেন না আমির নিজেও।
২৬ বছর আগে ‘হাম সাত সাত হ্যায়’ সিনেমার শুটিংয়ে গিয়ে কৃষ্ণকায় হরিণ শিকার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সালমান খানের বিরুদ্ধে; যা নিয়ে বহুবার আদালতে চক্কর কাটতে হয়েছে এ বলিউড সুপারস্টারকে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো– হরিণ শিকারকে কেন্দ্র করে এখনও প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছেন সালমান। এক রকম মৃত্যুর খড়গ মাথার ওপর ঝুলিয়ে রেখেছে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল।
তাদের দাবি, যে কৃষ্ণকায় হরিণকে তাদের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে গণ্য করেন, সেই হরিণ শিকার করার অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমা করবেন না। যদিও লরেন্স বিষ্ণোই এখন ভারতের জেলে, তার পরও তার নেটওয়ার্কের পান্ডারা দেশের নানা প্রান্তে খুনখারাবি চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু এই অভিনেতা নন, একই সঙ্গে তাঁর বাবা তথা খ্যাতিমান লেখক ও চিত্রনাট্যকার সেলিম খানকেও হুমকি দিয়েছে বিষ্ণোই গ্যাং।
এ ছাড়াও সালমানের বাসা বান্দ্রার গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে আততায়ীরা একবার কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। এর পর তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়। বিশেষ করে বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের পর বলিউড ভাইজানখ্যাত সালমানের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। তার পরও সালমান বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কাছে কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
আমির, সালমানের মতো নিজ দেশে নিরাপদ নন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে একাধিকবার মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন এ অভিনেতা। প্রথম হুমকি এসেছিল মাফিয়াদের কথা অনুযায়ী কাজ না করার জন্য। শাহরুখ সাহসিকতার সঙ্গে তাদের সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও সেবার কোনো অঘটন ঘটেনি।
কারণ, তখনও শাহরুখ বলিউড বাদশাহ হয়ে ওঠেননি। পরবর্তী সময়ে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবে শাহরুখ যখন প্রথম সারিতে চলে আসেন, তখন আবার এই অভিনেতার দরজায় কড়া নাড়া শুরু করেছিল মাফিয়ারা। তার কাছে ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সিনেমা থেকে আয় করা অর্থের কিছু অংশ দাবি করে বসেছিল।
সেবার শাহরুখ নির্ভয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি কোনোভাবেই তাদের কোনো টাকাপয়সা দেবেন না। এতে তারা যদি আক্রমণ করতে চায়, করতে পারে– তিনি ভয় পান না।
এমন জবাব পেয়ে মাফিয়ারা পিছিয়ে গিয়েছিল ঠিকই; রোষ যে এতটুকু কমেছে, তার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। কারণ, সেই ঘটনার পর আরও একবার গত বছরের নভেম্বরে ফোনে হুমকি পেয়েছেন শাহরুখ।
ভারতীয় পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সেই ফোনটি এসেছিল ছত্তিশগড় থেকে। কিন্তু হুমকিদাতাকে সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারা যায়নি। কারণ, তার ফোন নম্বরের কাগজপত্র ছিল জাল। এও জানা যায়নি, হুমকিদাতা কোনো মাফিয়া সদস্য কিনা।