চলে গেলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগীত পরিচালক, সুরকার ও কণ্ঠযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে রুপা মঞ্জুরী শ্যাম (লিজা)।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারে ভুগছিলেন সুজেয় শ্যাম। সম্প্রতি হৃদ্যন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয় এই প্রবীণ শিল্পীর। পরে তার শরীরের ভেতরে সংক্রমণ তৈরি হয়। পরে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া শ্যামের ডায়াবেটিসও ছিল অনিয়ন্ত্রিত। কিডনির সমস্যাও ছিল বলেও জানা যায়।
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন এই খ্যাতিমান সুরকার। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন সুজেয় শ্যাম। অজিত রায় ছিলেন গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী।
লিজা বলেন, ‘সব মিলিয়ে সুস্থই ছিলেন। কিন্তু গত ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে আর ফেরানো গেলো না।’
১৯৪৬ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সুজেয় শ্যাম। তাঁর বাবা অমরেন্দ্র চন্দ্র শাহ ছিলেন একটি বিদ্যালয়ের সহকারী এবং ‘ইন্দ্রেশর-টি’ নামে একটি চা বাগানের মালিক। তার শৈশব কেটেছে সিলেটের চা বাগানে আর পাহাড়ি এলাকায়। দশ ভাইবোনের মধ্যে সুজেয় ছিলেন ষষ্ঠ।
সংগীতে অবদানের জন্যে একাধিক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজেয় শ্যাম। ২০১৮ সালে পেয়েছেন একুশে পদক। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর প্রথম গানটির সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম। গীতিকার শহীদুল আমিনের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটির সুর ও সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। গানটির প্রধান কণ্ঠশিল্পী ছিলেন অজিত রায়।
সুজেয় শ্যামের সুর করা অন্য গানগুলোর মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আহা ধন্য আমার জন্মভূমি’, ‘আয়রে চাষি মজুর কুলি’, ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘শোন রে তোরা শোন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
প্রয়াত সুজেয় শ্যামের অন্তেষ্টিক্রিয়ার বিষয়ে এখনও ঠিক করা হয়নি। পরিবারের সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে-জানিয়েছেন স্বজনরা।
২০০৬ সালে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শিরোনামের একটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আরও ৫০টি গানের সংকলন নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারের গান – ২ নামে আরেকটি অ্যালবামের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।