১৫ বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন শাফিন আহমেদ

গানের শো করতে চলতি মাসের ৯ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদ। ২০ জুলাই তার একটি শো ছিল। কিন্তু শোয়ের আগে হোটেলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাকে ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা জানান, শাফিন আহমেদের ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

পরে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান তিনি।

শাফিন আহমেদের বড় ভাই হামিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, শাফিন আহমেদ গত ১৫ বছর ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন।

তিনি আরও জানান, ১৫ বছর আগে থেকে শাফিন আহমেদ হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। প্রথমবার তিনি ভারতে হার্ট অ্যাটাক করেন। হামিন জানান, ভারতের ওই হার্ট অ্যাটাকও মেজর ছিল। এরপর সেটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েক বছর আগে কক্সবাজারে আরেকবার হার্ট অ্যাটাক হয় শাফিনের।

জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জেও শাফিন আহমেদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকেরা তাকে মানসিক চাপ নেওয়া, এমনকি বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনা নিয়ে হামিন আহমেদ বলেন, অনুষ্ঠানের দিনই শাফিনের খারাপ লাগা শুরু করে। একটা পর্যায়ে খারাপ লাগা বাড়তেই থাকে। মাত্রাতিরিক্ত অস্বস্তিবোধও হচ্ছিল। খারাপ লাগাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে শাফিন সবার সামনে পড়ে যায়। হোটেল রুমে থাকা আয়োজকেরা ঘাবড়ে যান। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, কেন এমনটা হয়েছে, তা জানার চেষ্টাও করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যায় যখন অসুস্থ হয়, তখন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর কিছুটা ভালো অনুভব করে। তখন যাঁরা আয়োজক ছিলেন, তাঁরা হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আবার অ্যাটাক হয়, সেটা ম্যাসিভ ছিল। ৫-৭ মিনিট একেবারে অচেতন ছিল। এরপর সিপিআর করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়। সিপিআর শেষে তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।’

তবে ডাক্তারদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে শাফিন আহমেদ বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে চলে যান।

শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতঙ্গ কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুল।

এরপর বড়ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ডসংগীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মাইলস। যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনও। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন।

সংগীতের পাশাপাশি শেষ দিকে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এ গায়ক। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (এনডিএম) যোগ দেন। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হন। দুই দলেই গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শাফিন।

শাফিন আহমেদের কণ্ঠে তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ফিরিয়ে দাও, ফিরে এলে না, আজ জন্মদিন তোমার প্রভৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.