বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমা পিপ্পা’য় নজরুলসংগীতের সুর বিকৃতি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই দুই বাংলায় চলছে বিতর্ক-সমালোচনা। বাংলাদেশের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির সুর বিকৃত করে ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমাটিতে।
আর এ কাজটি করেছেন ভারতের অস্কার জয়ী সুরকার এ আর রহমান। এমন কাণ্ডে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বাংলাদেশ ও কলকাতায়। সমালোচনায় সাধারণ সংগীতপ্রেমিদের পাশাপাশি বিশিষ্টজনরাও। দাবি ওঠে, অবিলম্বে ওই চলচ্চিত্র থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে বিকৃত করে সুর দেওয়া ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিকে।
এদিকে এ বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন ‘পিপ্পা’ ছবির অন্যতম প্রযোজক সিদ্ধার্থ রয় কাপুর (রয় কাপুর ফিল্মস)।
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘এই গানকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে প্রযোজক, পরিচালক ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আমরা নজরুল পরিবারের থেকে প্রয়োজনীয় স্বত্ব নেওয়ার পরেই শিল্পের খাতিরে গানটিকে তৈরি করেছি। নজরুল ইসলাম ও তাঁর সৃষ্টির প্রতি আমাদের মনে গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে।’
কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ও তাঁর পুত্র কাজী অনির্বাণের কাছ থেকে যাবতীয় নিয়ম মেনে যে এই গানের স্বত্ব নেওয়া হয়েছিল, সে কথাও ওই বিবৃতি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গানটির ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে শ্রদ্ধা জানানোই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল। গানের কথা ব্যবহার ও সুরের পরিবর্তন চুক্তি অনুযায়ী করা হয়েছে।
এক্সে পোস্ট করা বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে সংগীতজগতে, সমাজ ও রাজনীতিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি ও গানটির আসল সুরের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়ের জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের কুর্নিশ জানাতেই এই অ্যালবাম বানানো হয়েছে।’
সবশেষে ওই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘আমরা মূল গানটিকে ঘিরে শ্রোতাদের আবেগকে সম্মান করি। শিল্প যেহেতু ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের পদক্ষেপ যদি কারও আবেগে আঘাত করে থাকে, তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’
তবে যার সংগীতায়োজন নিয়ে এত বিতর্ক, সেই এ আর রাহমান এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। অস্কারজয়ী ভারতের এই সংগীত পরিচালকের এমন আচরণে নজরুল প্রেমীদের মনে তাই এখনও জ্বলছে ক্ষোভের আগুন।