২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান গিটারের জাদুকর এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড সংগীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের প্রয়াণের দিনে নব্বই দশকেরই চার ব্যান্ড নগরবাউল, আর্ক, মাইলস ও দলছুট একমঞ্চে গান করতে যাচ্ছে।
‘ঢাকা রেট্রো’ শিরোনামের একটি কনসার্টে গাইবে নগরবাউল, আর্ক, মাইলস ও দলছুট। জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দলছুটের দলপ্রধান গায়ক, সুরকার, সংগীতপরিচালক বাপ্পা মজুমদার।
তিনি জানান, আসছে ১৮ অক্টোবর রাজধানীর পূর্বাচলের ঢাকা অ্যারেনায় আয়োজিত হবে ঢাকা রেট্রো কনসার্টটি। এটি আয়োজন করেছে ব্লু ব্রিক কমিউনিকেশন।
শুরু হয়েছে টিকিট বিক্রিও। বেশ সাড়া মিলছে আগ্রহীদের। গেট সেট রকে দুই ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। ভিআইপি টিকিটের জন্য মূল গুনতে হচ্ছে ২,৪০০ টাকা। সাধারণ ক্যাটাগরিতে ১,৪০০ টাকায় মিলছে কনসার্ট উপভোগের টিকিট।
আয়োজকরা জানান, কনসার্টটি শুরু হবে ১৮ অক্টোবর বিকেল ৫টায়। দর্শকের জন্য গেট খুলে দেওয়া হবে বেলা ৩টায়।
ব্লু ব্রিক কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রিয়াসাত নাদিদ বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের ব্যান্ডগুলোর কদর এখনো কমনি। এখনো তাদের গান সবার মুখে মুখে। নানা প্রজন্মের সংগীতপ্রেমীরা তাদের কনসার্ট নিয়ে আগ্রহী। সেটা ভেবেই আমরা এই আয়োজন করেছি। আশা করছি, এই কনসার্ট সবার জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।’
তবে কনসার্টটির সঙ্গে আইয়ূব বাচ্চুর সংশ্লিষ্ট কোনো আয়োজন থাকছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেকে মনে করছেন বিষয়টি সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছে কনসার্টের আয়োজকরা।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পারিবারিক আবহে সংগীতটা না থাকার পরও ছোটবেলাতেই গিটারের প্রেমে পড়েন। যদিও বাবার অমত ছিল। কিন্তু ছেলের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে ১১তম জন্মদিনে একটি গিটার কিনে দেন। সেই গিটারেই শুরু। দেহ-মননে তিনি যেমন বেড়ে উঠেছেন, তার সঙ্গে বড় হয়েছে সংগীত সত্তাও।
কলেজজীবনে ওঠার পরই বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথমে এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে ‘আগলি বয়েজ’ রাখেন। এই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। আর গিটারিস্ট ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তারা স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। ১৯৭৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবি। সেখানে ছিলেন জেমসও। তবে আইয়ুব বাচ্চুর উত্থানের সূচনা মূলত ১৯৮০ সালে ‘সোলস’-এ যোগদানের পর। এই ব্যান্ডের হয়ে ১৯ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এরপর নিজে কিছু করার কথা ভাবলেন, সেই ভাবনা থেকে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, যা পরে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে বিপুল খ্যাতি লাভ করে।
ব্যান্ডের হয়ে আইয়ুব বাচ্চু উপহার দিয়েছেন—এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮) এবং যুদ্ধ (২০১২) অ্যালবামগুলো।
এ ছাড়া একক শিল্পী হিসেবে তাঁর অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে—রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এর বাইরে তাঁর গাওয়া গানের অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে।
আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে কালজয়ী কিছু গান হলো—‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘মেয়ে’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘রুপালি গিটার’, ‘উড়াল দেব আকাশে’, ‘একচালা টিনের ঘর’, ‘তারাভরা রাতে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আম্মাজান’, ‘ফেরারি মন’ ইত্যাদি।