আড্ডায় জেমস: আজিজ বোর্ডিং থেকে তারকাখ্যাতি, তবুও শান্ত জীবনের খোঁজে মন

গত ২৩ মার্চ গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে এক চমৎকার আড্ডার পরিবেশে পাওয়া গেল বাংলা রক সংগীতের কিংবদন্তি, নগরবাউল জেমসকে।

দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় উঠে এলো তাঁর জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়—দর্শন, জীবনের পূর্ণতা-অপূর্ণতা, আর শৈশব-কৈশোরের মধুর স্মৃতি।

জেমস জানান, গানের জীবনের প্রতি পরিবারের সম্মতি ছিল না। বাবা মোজাম্মেল হক ও মা জাহানারা খাতুন চাননি ছেলে গায়ক হোক।

অভিমানে ঘর ছেড়ে পথে নামেন জেমস, আর সেই পথ তাঁকে নিয়ে যায় চট্টগ্রামের কদমতলীতে আজিজ বোর্ডিংয়ের ৩৬ নম্বর কক্ষে। সেখান থেকেই শুরু হয় তারকাখ্যাতির যাত্রা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর মা-বাবা এই খ্যাতি দেখে যেতে পারেননি।

প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘মা’ ও ‘বাবা’ গান দুটি গাওয়ার সময় জেমসকে প্রায়ই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা যায়। কনসার্টে হাজারো শ্রোতার সামনে আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন তিনি গেয়ে ওঠেন, “বাবা কত দিন কত দিন দেখিনা তোমায়…” কিংবা মাকে খুঁজে বলেন, “রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস?

কোথায় আছে কেমন আছে মা?”—তখন তাঁর কণ্ঠে যেন প্রতিধ্বনিত হয় মা-বাবা হারানো সব সন্তানের হাহাকার। মায়ের প্রসঙ্গে কথা উঠতেই চোখে জল চলে আসে জেমসের।

জিজ্ঞেস করা হয়, মায়ের হাতের কোনো রান্নার স্বাদ কি এখনো মনে পড়ে? জবাবে আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, “তা তো মনে থাকবেই। ভুলে যাওয়ার কিছুই নেই। মায়ের হাতের সব খাবার এখনো খুব মিস করি। মায়ের রান্না তো কার না ভালো লাগে!”

জেমসের মনে শহর ছেড়ে শান্ত কোনো গ্রামে চলে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এখনো রয়ে গেছে। বলেন, “এখনো ইচ্ছে আছে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার। সব সময়ই মনে হয় শান্ত কোথাও চলে যাই। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি আমাকে দ্বিধায় ফেলে—এখানে থাকতে বিরক্ত লাগে, কিন্তু দূরে গেলে আবার শহরটাকে মিস করি। এক দোটানায় থাকি সব সময়।”

এই নগরবাউলের জীবনটাই যেন এক ছন্দের ভেতরেও দোলাচলের গল্প—যেখানে হারানো ভালোবাসা, জীবনের কষ্ট, আর সৃষ্টিশীলতার যন্ত্রণা মিলেমিশে এক অনন্য সুর হয়ে ধ্বনিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.