ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ায় নিন্দা

গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বাড়ি। নগরীর ঘোড়ামারা মহল্লার মিয়াপাড়ায় অবস্থিত এই বাড়ির আঙিনায় এখন শুধুই ইটের স্তূপ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি কর্মীরা। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানান, পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে একটি ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা দেশের চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু ১৯৮৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার এই বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজকে ইজারা দিলে সে স্থানে একটি হোমিওপ্যাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেলস্ট্যান্ড করার অজুহাতে ভবনের একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেয়।

আমরা এ হীন কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এরপর ভাঙার কাজ স্থগিত হয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। পরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন পুরনো বাড়িটি আগের অবস্থায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসানের পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে তারা দাবি জানিয়ে বলেন, “আমরা ঋত্বিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছিলাম।

আমরা আশা প্রকাশ করেছিলাম- দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গে একটি ভিন্নমাত্রার চলচ্চিত্র আন্দোলন এই প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে। আর এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশ সাধিত হবে। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ ও ৭ আগস্ট দুই দিনে ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িটিকে স্থায়ীভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই হীন কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, হোমিওপ্যাথ কলেজটি ভিন্ন স্থানে স্থানান্তর এবং বাড়িটির অবশিষ্টাংশ ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে সংরক্ষণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঋত্বিক ঘটক জীবনের শুরুর সময়টা কাটিয়েছেন রাজশাহীর এই পৈতৃক বাড়িতে। এ বাড়িতে থাকার সময় তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। রাজশাহী কলেজ ও মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ওই সময় ‘অভিধারা’ নামে সাহিত্যের কাগজ সম্পাদনা করেন ঋত্বিক। তাঁকে ঘিরেই তখন রাজশাহীতে সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলন বেগবান হয়। এ বাড়িতে থেকেছেন ঋত্বিক ঘটকের ভাইঝি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.