নতুন বাংলাদেশ, নতুনভাবে গড়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানি কমিটি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২৩ জুরি বোর্ড ও সর্বশেষ চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।
নবগঠিত এসব কমিটি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক মাধ্যমে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন নিজেদের মত। চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মতে সবচেয়ে ভালো হয়েছে চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি।
৯ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্টে সম্প্রতি গঠিত কমিটিগুলো নিয়ে নিজের পর্যালোচনা তুলে ধরেন ফারুকী।
তিনি লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রবিষয়ক যতগুলো কমিটি হয়েছে, তার মধ্যে পরামর্শক কমিটিই আমার বিবেচনায় সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বাকি কমিটিগুলোতে যোগ্য লোক যেমন আছে, কিছু বিস্ময়কর নামও আছে। এই সমালোচনাটা করে রাখা দরকার, যাতে সরকার বুঝতে পারে। না হলে আগের আমলের মতো “কর্তা যা করেছেন মাইরি” সিচুয়েশন বানিয়ে ফেলব আমরা।’
সেসব কমিটির বিষয়ে পরামর্শ হিসেবে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমার বিবেচনায় এখানে আরও কিছু অংশীজন থাকা উচিত ছিল। যেমন ফাহমিদুল হক, বিধান রিবেরু, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, নুহাশ হুমায়ুন। স্বচ্ছতার জন্য বলে নেওয়া ভালো, আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল পরামর্শক এবং আরেকটা কমিটিতে থাকার জন্য। আমি ব্যক্তিগত কারণে থাকতে চাইনি। এখন যাদের নাম উল্লেখ করলাম, তারা থাকতে অপারগতা জানিয়েছে কি না আমি জানি না।’
পরামর্শক কমিটিতে না থাকলেও কিছু পরামর্শ তুলে ধরে ফারুকী লিখেছেন, ‘আমার বক্তব্য থাকবে—এই পরামর্শক কমিটি থেকে যেসব পরামর্শ যাবে তা যেন অংশীজনরাই তৈরি করে দেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল এক্সিকিউশনের দিকটা দেখা উচিত। নীতি প্রণয়নে তারা হাত না দেওয়াই ভালো হবে। কারণ তারা তো আমাদের সমস্যা এবং প্রয়োজনটা জানেন না।’
এ ছাড়া চলচ্চিত্রশিল্পে কার্যকর পরিবর্তন আনতে সিনেমা হলে ই-টিকিটিং ও রেভিনিউ শেয়ার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘শিল্পকলা একাডেমির জমি আছে মোটামুটি দেশজুড়েই। কমপক্ষে ৩০ জেলায় শিল্পকলার জায়গায় মাল্টিপ্লেক্স করে সেটা দরপত্রের ভিত্তিতে প্রাইভেট ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। যেহেতু আমাদের জাতিগত দুর্নাম “আমরা শুরু করি, অব্যাহত রাখি না”, সেহেতু এইসব মাল্টিপ্লেক্সকে মনিটরিংয়ে রাখতে হবে এর মেইনটেনেন্স ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। না হলে লিজ বাতিলের শর্ত থাকতে হবে। এখন ঝামেলা হলো, শিল্পকলা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর সিনেমা-টিভি-ওটিটি তথ্য ও সম্প্রচারে। এই দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় করে হলেও এটা করা দরকার।’
চলচ্চিত্রে অর্থায়ন ও সহযোগিতা প্রসঙ্গেও পরামর্শ ব্যক্ত করেছেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটা হচ্ছে ফিল্ম ফান্ড এবং সাপোর্ট সিস্টেম। আমাদের সামনে বুসান, সানড্যান্স, বার্লিন, রটারডাম, ফিল্মবাজার স্ক্রিন রাইটার্স ল্যাবের উদাহরণ আছে। আমি মনে করি, পরামর্শক কমিটির উচিত অনুদান প্রথায় আমূল পরিবর্তন আনা। ৫০ ভাগ ছবি ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড টাইম ফিল্মমেকারদের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। এই ৫০ ভাগের মাঝে কমপক্ষে অর্ধেক নারী ফিল্মমেকারদের জন্য থাকা উচিত। তো এই নতুন পরিচালকদের স্রেফ ফান্ড দিয়েই হাত গুটিয়ে ফেলা যাবে না। স্ক্রিন ল্যাবের মতো ইনকিউবেটরে লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল মেন্টর দিয়ে এদের সহায়তা করতে হবে।
পাশাপাশি আমাদের অনুদান পলিসি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত। আমরা কোন ধরনের ছবিকে অনুদান দিব? ইরানের মতো সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট এবং ইমপ্যাক্টফুল স্টোরিটোলিং? নাকি কলকাতা আর্টহাউজের দুর্বল ফটোকপি? নাকি বেলা তারের মতো ছবি? আমার বিবেচনা হচ্ছে, আমাদের এখানকার মানুষ, তাদের সম্পর্ক, আবেগ, পাগলামো এসব মিলিয়ে আমাদের আশেপাশে নিজস্ব গল্প এবং চরিত্রেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে। এইসব নিয়ে সোশ্যালি রিলেভ্যান্ট ছবির সংখ্যা বাড়লেই আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশী নিউ ওয়েভ হতে পারব।’