রাজধানীর পূর্ব রায়েরবাজার এলাকার একটি মেস থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক মাসুদুল মাহমুদ রুহানের (২৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ‘রেডরাম’ চলচ্চিত্র, ‘দ্য সাইলেন্স’ ওয়েব সিরিজ, ‘আমি কি তুমি’সহ আরও বহু নির্মাণে প্রযোজনা করেছেন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। জানা গেছে, সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল এই প্রযোজকের। যে কারণে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে গত ৪ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন রুহান। যেখানেও ছিল বিরহের কথা।
সেই পোস্টে রুহান লেখেন, ‘আমার চেনা পৃথিবীর বুকে যেমন তুমি নাই, তোমার বুকেও আমি নাই! তাহলে কেন সেদিন বলেছিলে? আমার সাথেই এই জন্ম কাটিয়ে দেবে? ভুল বুঝিও না। আমি দোষ দিচ্ছি না। জাস্ট বললাম আর কি!’
এর আগে একটি পোস্টে সূরা আর রহমানের একটি আয়াত শেয়ার করেন রূহান। সেই আয়াতটি হল-‘তবে তোমরা তোমাদের রবের কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে।’
এরপর তিনি লেখেন, ‘আমরা কতো অদ্ভুত ভাবে সমগ্র বিশ্বের সকলে মিলে একই সুতায় গাঁথা। যে সূতা দেখাও যায় না!! কি বিচ্ছিরি রাতের শেষে এতো সুন্দর সকাল লুকিয়ে থাকতে পারে আমরা ভেবেও দেখি না…। জীবন কি অদ্ভুত! কতো সুন্দর!’
রুহানের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিতে দেখা দেখা গেছে পরিচিতজনদের। যারা সকলেই বলছেন, ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন এই প্রযোজক। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের শোক কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
ঢাকা মেডিকেল মর্গে মৃত রুহানের খালাতো ভাই মনজুরুল হাসান অলি জানান, গত দুই থেকে আড়াই বছর আগে বিয়ে করেন রুহান। স্ত্রী নিয়ে রায়েরবাজার শেরেবাংলা রোডে থাকতেন। তবে মাসখানেক আগে তাদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকেই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন রুহান। ডিভোর্সের কিছুদিন আগ থেকেই মেসে থাকা শুরু করেন। গত রাত ১টার দিকে রুহানের সহকর্মীদের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পান তারা। রুহান ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলেও তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।
রুহানের লাশ উদ্ধারের পর হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাওন কুমার বিশ্বাস জানান, এক মাস আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় রুহানের। গত দুই মাস ধরে পূর্ব রায়েরবাজারের ওই মেসে থাকতে শুরু করেন তিনি। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শুটিংয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার আসা যাওয়া বেশি ছিল। যখন ঢাকায় ফিরতেন তখন ওই মেসে গিয়ে থাকতেন। তার রুমমেট বুধবার রাত ১১টার দিকে মেসে ফিরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখেন, ফ্যানের সাথে বিছানার চাদর পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রুহান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনেন। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে মধ্যরাতে সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ এবং পারিবারিক বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবুও বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।