দেশের চলচ্চিত্র নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রতি বছর প্রায় অর্ধশতাধিক নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেও, বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমাগুলো তেমন সাফল্য পাচ্ছে না। তবুও, সিনেমা নির্মাণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় সংশ্লিষ্টরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে কলকাতার নায়িকাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ঈদের মতো বড় উৎসবেও তাদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। তবে, দেশীয় নায়িকাদের সংকট আছে কিনা, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ভিন্নমত পোষণ করেন।
প্রযোজক ও পরিচালকদের মতে, নায়িকা অনেক রয়েছেন, তবে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নায়িকার অভাব রয়েছে। এর ফলে, দর্শকদের সিনেমার প্রতি আগ্রহ কমেছে, ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে, এবং প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে অনেক নায়িকা রয়েছেন, যারা দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারছেন না। ব্যক্তিগত গুজব, বিয়ে-বিচ্ছেদসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠিত নায়িকারাও তাদের ইমেজ হারাচ্ছেন। তাদের কারও নাম শুনলেই দর্শকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ অবস্থায়, তাদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
৯০-এর দশকের মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমাদের মতো নায়িকারা এখন আর তৈরি হচ্ছেন না। পরবর্তী প্রজন্মের ব্যস্ত নায়িকারাও এখন তেমন কাজ পাচ্ছেন না, অনেকেই কাজ কমিয়ে দিয়েছেন। কিছু নায়িকা ব্যস্ত থাকলেও, অধিকাংশই বেকার। ফলে, তারা আলোচনার বাইরে চলে গেছেন। অন্যদিকে, কলকাতার নায়িকাদের প্রভাব ঢাকাই সিনেমায় বাড়ছে, এবং তাদের প্রতি দর্শকদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে, দেশীয় নায়িকারা বেকার হয়ে পড়বেন, যা সিনেমা শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একসময়ের ব্যস্ততম নায়িকা অপু বিশ্বাস, শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৭০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার অধিকাংশই ব্যবসাসফল। শাকিব খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, তিনি দর্শকপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। বর্তমানে তিনি সিনেমায় কম দেখা গেলেও, ইউটিউবার হিসেবে নতুন পরিচয়ে অনলাইন কনটেন্টে মনোযোগী হয়েছেন। সর্বশেষ তিনি ‘ট্র্যাপ: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ও ‘ছায়াবৃক্ষ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যা ২০২৪ সালে মুক্তি পায়। ২০২৩ সালে ‘লাল শাড়ি’ সিনেমা দিয়ে প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন, যেখানে সাইমন সাদিকের বিপরীতে অভিনয় করেন।
মাহিয়া মাহি, ২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ দিয়ে অভিষেকের পর ৩০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। হঠাৎ করে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন। নৌকার টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন, তবে পরাজিত হন। এখন তিনি আবার সিনেমায় ফেরার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আগের মতো তার তারকা ইমেজ নেই। সর্বশেষ তিনি শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন, যা ২০২৪ সালে মুক্তি পায়।
নিপুণ আক্তার, ২০০৬ সালে সিনেমায় আসেন, তবে গত কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে অনিয়মিত। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ‘সুজন মাঝি’ সিনেমায় দেখা যায় তাকে।
পরীমনি, ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিতর্কিত নায়িকা হিসেবে পরিচিত। সর্বশেষ তিনি ২০২৩ সালের মে মাসে ‘মা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার ‘ডোডোর গল্প’ নামে একটি সরকারি অনুদানের সিনেমা।
নাজিফা তুষি, অর্চিতা স্পর্শিয়া, আজমেরী হক বাঁধন, মন্দিরা চক্রবর্তী, ঐশীসহ টিভি থেকে সিনেমায় আসা নায়িকাদের হাতেও এখন কাজ নেই। অনেকে নতুন সিনেমার শুটিং শুরুর অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া, আঁচল, জাহারা মিতু, আইরিন সুলতানা, বিপাশা কবিরসহ বর্তমান প্রজন্মের অনেক নায়িকাও বেকার।
সার্বিকভাবে, ঢাকাই সিনেমায় দেশীয় নায়িকাদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে, এবং কলকাতার নায়িকাদের উপস্থিতি বাড়ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, দেশীয় নায়িকাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।