‘কোকিলকণ্ঠী’ শব্দটির সঙ্গে যে নামটি জুড়ে আছে, তিনি বেবী নাজনীন। নব্বই পরবর্তী আধুনিক বাংলা গানের ভুবন যার স্বরগ্রামের সঙ্গে উঠতো, নামতো, নাজনীন তাদের অন্যতম।
ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে তিনি নাম লেখান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতিতে। কোনঠাসা হয়ে একপর্যায়ে পাড়ি জমান বিদেশে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অবশেষে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।
নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন ছিল ২৩ আগস্ট। বিশেষ এই দিনটিতে ভক্তদের দিলের বড় সুখবর। জানালেন শিগগির দেশে ফিরছেন তিনি।
ব্লাক ডায়মন্ড খ্যাত এই সংগীত তারকা বলেন, ‘জন্মদিন উপলক্ষে আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমি যেন সুস্থতার সঙ্গে সব কাজ করে যেতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষকে খুব মিস করছি। দেশের মানুষকে আবারও গান শোনাতে শিগগিরই ফিরব, নতুন নতুন গান উপহার দেব। দেশে বিভিন্ন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে আমার কিছু গানের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। সেগুলোও সম্পন্ন করব।’
জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরবেন তিনি।
রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়া প্রসঙ্গে বেবী নাজনীন বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করার স্বাধীনতা সবারই থাকা উচিত। অথচ রাজনীতি করায় আমাকে কনসার্ট দেওয়া হয়নি। টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠান থেকেও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।’
তবে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাঙালিদের অনুষ্ঠানে বেবী নাজনীনের আবেদন কখনই ফুরায়নি। আসছে ৩১ আগস্ট বেবী নাজনীন গান শোনাবেন কানাডার টরোন্টোতে। সেখানকার বার্চমাউন্ট পার্কের বাংলা মেলায় গাইবেন তিনি। এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশে দুই-তিন দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি যাবেন কানাডায়। সেখানে কাজ শেষে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে দেশে ফিরবেন তিনি।
দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয়া হবেন কি না জানলে চাইলে বেবী নাজনীন বলেন, ‘গান শোনানোর পাশাপাশি আমি মানুষের সেবা করতে চাই। দেশে ফিরলে দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালনে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। একটি সুন্দর দেশ গড়তে দলের হয়ে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’
গত সাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে বহু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সংগীত তারকা। দেশীয় সংগীতাঙ্গনে সর্বাধিক একক, দ্বৈত ও মিশ্র অডিও অ্যালবামের শিল্পীদের অন্যতম একজন বেবী নাজনীন। অ্যালবামের পাশাপাশি টিভি, চলচ্চিত্র, মঞ্চ প্রতিটি মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় তিনি। যার সুবাদে খ্যাতিমান গীতিকবি, সুরকার, সংগীতায়োজকদের পাশাপাশি তরুণরা তাঁকে নিয়ে অসংখ্য কাজ করেছেন; যা শ্রোতাদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। একইভাবে বরেণ্য ও সমসাময়িক প্রায় সবশিল্পীর সঙ্গে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
অনিন্দ্য গায়কী আর অনবদ্য সৃষ্টির জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তাঁর গাওয়া ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দু’চোখে ঘুম আসে না’, ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘মরার কোকিলে’, ‘আর কতদিন’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘প্রিয়তমা’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘ও বন্ধু তুমি কই কই রে’সহ আর অসংখ্য গান আজও শ্রোতাদের মনে অনুরণন তুলে যাচ্ছে।