লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের মধ্যে যারা দিনের পর দিন একসঙ্গে কাটিয়েছেন, তারাই আজ একে অপরের মুখোমুখি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে একপক্ষ নেমেছিলেন রাস্তায়, আরেক পক্ষ কথা বলেছেন বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে যখন সংস্কারের কাজ চলছে তখন শিল্পীদের সংগঠনগুলোর সংস্কার চাইলেন সংস্কারকামী পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সমমনা সংস্কারকামী পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা বসেছিলেন। সেখানে পারস্পারিক আলোচনা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে তারা পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেন।
এমনকি দর্শকদেরও এসব বিষয়ে নিজেদের মত দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে গ্রাউন্ড জিরোতে উপস্থিত ছিলেন মাহাফুজ মুন্না, কামরুজ্জামান তপু, আরেফিন জিলানী, শ্যামল মাওলা, ফারহানা হামিদ আত্মি, এফ এস নাঈম, মাঈন হাসান, সুষমা সরকার, সাক্ষ্য শাহীদ, তামান্না হক বর্না, কেয়া আল জান্নাহ, উম্মে তাসনিম নাঈমা, শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব, উজ্জ্বল কবির হিমু, এহসানুর রহমান, কাজী নওশাবা আহমেদ, ক্রিস্টিয়ানো তন্ময়, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু, খায়রুল বাসার, অরণ্য বিজয়, জাহিদ চৌধুরী, শাহীন স্মৃতি, মনোজ প্রামাণিক, আহমেদ সাব্বির, হোসাইন জীবন, নাদিয়া আহমেদ, আজমেরী হক বাঁধন, শরীফ সিরাজ, নীলা ইস্রাফিল, মৌসুমি হামিদ, ইন্তেখাব দিনার, যোজন মাহমুদ, মেহমুদ সিদ্দিকী লেলিন, কাজী ফয়সাল, মো. আক্তার হোসেন, সামি দোহা, সাহানা রহমান সুমী, রিয়াজ মহসিন আকাশ, সোহেল মন্ডল, হাসানাত রিপন, সিয়াম নাসির, পাভেল জামান, ইমরান হাসো, মীর নওফেল, আশরাফি জীসান, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাফিজুর নুর ইমরান।
সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেসবুকে আজমেরি হক বাঁধন লিখেছেন সেসব সিদ্ধান্তের কথা। তিনি জানান, অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এর সাথে বেশ কয়েকবার আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি। চিঠি পাঠানোর পর তারা জানান যে, তারা শুধু সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বসবেন। কিন্তু আমরা সব সাধারণ পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা একসাথে আলোচনা করে সংস্কার করতে চেয়েছি। তাই আজ তাদের গ্রাউন্ড জিরোতে চায়ের দাওয়াত দিই। কিন্তু তারা ফিরতি চিঠিতেও জানান যে, তারা শুধু সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
সংস্কারকামী শিল্পীদের অভিযোগ, তারা সংগঠনভুক্ত ‘সদস্য’ কিংবা ‘অ-সদস্য’ শব্দগুলো ব্যবহার করে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। সেই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। পরিবর্তনশীল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনমুখর বাংলাদেশে, অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ-এর বর্তমান কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলীে, কার্যকরী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মধ্যে তারা একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং সব মানবিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন।
আলোচনার ভিত্তিতে তাদের নেওয়া পাঁচ সিদ্ধান্ত হলো-
১.. কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা এবং শিল্পীদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটিয়েছে সে জন্য দুঃখ প্রকাশ।
২. একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে মানবিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করায় জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
৩. প্রথম দুই প্রস্তাবে অনীহা প্রকাশ করলে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে সকলকে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. নতুন কমিটি গঠন ও সাংগঠনিক সংস্কারের মাধ্যমে সব অভিনয়শিল্পীর কাছে একে গ্রহণযোগ্য করা তোলা।
৫. সব অভিনয়শিল্পীর স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় বৈষম্যহীন সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ন।
বাঁধন জানান, আমরা সংস্কারকামী সমন্বিত সাধারণ অভিনয়শিল্পীর পক্ষ থেকে দেশের দৃশ্যমাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা একযোগে আমাদের সব অভিনয়শিল্পীর স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে যে সংগঠন, সে ধরনের একটি সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করি।