শাকিব খানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কয়েকজন প্রযোজক

শুটিং শেষ না হওয়ায় বছরের পরপর আটকে আছে শাকিব খান অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা। এসব সিনেমার ২০ থেকে ৮৫ ভাগ শুটিং শেষ হওয়ার পরও শিডিউল জটিলতার কারণে বাকি কাজ শেষ করা যায়নি। এতে লোকসানে পড়েছেন প্রযোজকেরা। এসব ছবির প্রযোজক ও পরিচালকের কেউ কেউ এই ক্ষতির জন্য ছবির নায়ক শাকিব খানকে দায়ী করেছেন। বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়ে প্রযোজকদের কেউ কেউ ইঙ্গিত দিলেন, শাকিব খানের নামে মামলা করতে পারেন তারা।

ভুক্তভোগী পরিচালক ও প্রযোজকরা বলেন, বেশকিছু সিনেমার কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়ে আর এগোয়নি। এ বিষয়ে শাকিবের সঙ্গে কথা হলে শাকিবও বিষয়টি আমলে নেননি, বরং এড়িয়ে গেছেন।

জানা গেছে, ঢালিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেতার বিরুদ্ধে তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পারিশ্রমিক নিয়েও সময় পার করতে করতে দীর্ঘ ১০ বছর কেটে যাওয়ার পরও কোনো সমাধান না হওয়ায় মামলার দিকে এগোতেই বাধ্য হচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে প্রযোজক মনিরুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২০১৮ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি বরাবর শাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। সমিতির নেতাদের কাছে দাবি করা হয়েছিল, শুটিংয়ের শিডিউলের ব্যবস্থা করে দেয়ার। সমিতির নেতারা সুবিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ বছর পার হয়ে গেলেও তার সুরাহা হয়নি। তাই আদালতে মামলা ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন তিনি।

শাকিব প্রসঙ্গে প্রযোজক মনিরুজ্জামান আরও বলেন, ১০ বছর আগে শাকিবের পারিশ্রমিক ছিল ১৫ লাখ টাকা। শুটিং শুরুর আগেই এক চেকে তা পরিশোধ করি। তারপরও সিনেমার ৭০ ভাগ কাজ করার পর শিডিউল ফাঁসিয়েছে। এরপর চুক্তির বাইরে পারিশ্রমিক হিসেবে শাকিব আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে শিল্পী অমিত হাসানের মাধ্যমে তা পরিশোধ করি। সে ছবির জন্য এখন পর্যন্ত আমার প্রায় কোটি টাকা আটকে গেছে।

প্রযোজক মনিরুজ্জামানের সুরে তাল মিলিয়েছেন আরেক পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবরও। সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমার পরিচালিত শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘মাই ডার্লিং’ সিনেমা আটকে রয়েছে প্রায় ১০ বছর হতে চলেছে। এর সুরাহা কবে হবে তা জানি না।

মেঘমালা কথাচিত্র প্রযোজিত ও জি সরকার পরিচালিত ‘লাভ ২০১৪’ সিনেমার একই পরিণতি। সিনেমাটির ৫০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পর শাকিবের শিডিউল না পাওয়ায় আটকে গেছে সিনেমাটি।

২০০৮ সালে নজরুল ইসলাম খানের ‘স্বপ্নের বিদেশ’ সিনেমাটিও ঝুলে আছে। এ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। শাবনূরের শুটিং শেষ হলেও এ সিনেমায় শাকিবের শুটিং শেষ হয়নি। গল্পের প্রয়োজনে শাকিবকে নিয়ে বরফের দেশে গিয়ে এ সিনেমার শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজেট সমস্যার কারণে সিনেমার সংশ্লিষ্টরা বরফের দেশে যেতে না পারলে শাকিব এ সিনেমার শিডিউল ফাঁসিয়ে দেন। পরে আরেক প্রযোজক ঠিক করে শাকিবের শিডিউল নিতে গেলে শাকিব এ সিনেমা নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি।

২০১৬ সালে শুরু হওয়া ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামের সিনেমাটিরও একই অবস্থা। এ সিনেমার নির্বাহী প্রযোজক মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা আবার সিনেমাটির কাজ শুরু করার কথা ভাবছি। সিনেমার কাজটি শেষ পর্যন্ত শেষ হবে কিনা তার সম্পূর্ণ এখন শাকিব খানের শিডিউল পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।

জি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ছবির শুটিং বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আমি একটু অসুস্থ, হাসপাতালে আছি। কথা বলতে পারছি না, পরে কথা বলব।’

পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন,‘স্বপ্নের বিদেশ’ সিনেমাটি নিয়ে প্রত্যাশা ছিল অনেক কিন্তু আর হলো না। শেষ হয়েও শেষ হলো না ছবিটি। আর মাত্র ১৫ ভাগ কাজ শুটিং করা গেলেই ছবির কাজ শেষ হয়ে যেত। শাকিব ওই সময় বলেছিলেন বরফ ছাড়া তিনি শুটিং করবেন না, শিডিউল দেবেন না। কিন্তু প্রযোজক সে সময় বাজেট সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে কাজটিও আর শেষ করা হয়নি।

এই পরিচালক আরও বলেন, বছর চারেক আগে আমি অন্য একজন প্রযোজক ব্যবস্থা করে শাকিবের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে শুটিংয়ের ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া পাইনি। বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি। এর পর থেকে আর শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। এত দীর্ঘ সময় পরে আর গিয়ে লাভ হবে কি না জানি না।

একাধিক প্রযোজক আর পরিচালকের এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে মোবাইলের মাধ্যমে শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।