সালমান শাহ আমার এমন বন্ধু ছিল যাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়: মৌসুমী

চলচ্চিত্র অঙ্গনে বড় শূন্যতা তৈরি করে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চল যান বাংলা সিনেমার রাজপুত্র সালমান শাহ্‌। বাংলা চলচ্চিত্রের এ রাজপুত্রের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল শুক্রবার। প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করলেন নব্বইয়ের দশকে পর্দা কাঁপানো নায়িকা মৌসুমী।

সোহানুর রহমান সোহানের পরিচালনায় ১৯৯৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এ ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে উদয় হয়েছিল নতুন দুই মুখ সালমান শাহ্‌ ও মৌসুমী। রাতারাতি তারা তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে সালমান শাহ্‌ হয়ে উঠেন আইকন।

সালমান শাহকে নিয়ে মৌসুমী বলেন, ‘সালমান আমার এমন বন্ধু ছিল যাকে কোনোদিনই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। চলার পথে প্রতিটি মুহূর্তেই সালমানকে মিস করি। সালমান বেঁচে থাকলে হয়তো আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা আরও সুন্দর হতে পারত। আরও অনেক কিছুই হতে পারত।

তিনি বলেন, সালমান যেদিন মারা যায়, তার মৃত্যু সংবাদটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার মনে পড়ে আমি, সানী আর গুলজার ভাই একসঙ্গে তাকে শেষবারের মতো দেখতে গিয়েছিলাম। এমন একজন নায়ককে আমরা অকালে হারিয়ে ফেলেছিলাম বলে ইন্ডাস্ট্রিটা কিন্তু থমকে গিয়েছিল। বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমরা সবাই। আজও তার ভক্তরা তাকে খুব মিস করে, বিশেষ করে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে গভীর শ্রদ্ধা ভালোবাসা নিয়ে সবাই স্মরণ করে। এটা তার অনেক বড় প্রাপ্তি। কারণ মৃত্যুর এত বছর পরেও তাকে সবাই স্মরণ করে পরম ভালোলাগা নিয়ে।

প্রথম ছবি সুপার-ডুপার হিট হওয়ার পর মৌসুমী-সালমান জুটিকে নিয়ে অনেক পরিচালক ছবি বানাতে চাইলেও এরপর মাত্র তিনটি ছবিতে তাদের দেখা গিয়েছিল। এ তিনটি হচ্ছে─’অন্তরে অন্তরে’, ‘স্নেহ’, ‘দেন মোহর’।

ক্ষণজন্মা এই নায়কের জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরীতার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানের আসা নানার কারণেই।

সালমানের পারিবারিক নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড় ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী। ইমন নামে অভিনয় জীবন শুরু হয় বিটিভিতে শিশুশিল্পী হিসেব ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি।

মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ’র অভিনয়ে অভিষেক হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। প্রথম সিনেমাই সালমান শাহ দর্শকের মাঝে ঝড় তোলেন। এ সিনেমার মাধ্যমে চিত্রনায়িকা মৌসুমীও চলচ্চিত্রে আসেন। সালমান-মৌসুমী জুটি অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান।

পরবর্তীতে এ জুটি ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’ সিনেমায় অভিনয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর শাবনূরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সালমান শাহ। এ জুটিও অসামান্য জনপ্রিয়তা পায়। প্রায় এক ডজন সিনেমায় এ জুটি অভিনয় করেন।

সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো, ‘তুমি আমার’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘বিচার হবে’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘সুজন সখি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’ ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.