‘সিনেমা না চললে মান্না এমনভাবে কাঁদতো যেন পরীক্ষায় ফেল করেছে’

আজ ১৪ এপ্রিল, বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র এ এস এম আসলাম তালুকদার মান্নার জন্মদিন। তিনি শুধু একজন জনপ্রিয় অভিনেতাই ছিলেন না, ছিলেন চলচ্চিত্রে প্রাণ ঢেলে দেওয়া এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। তার ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা সবই আবর্তিত হতো দেশীয় সিনেমাকে ঘিরে। অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনবদ্য অভিনয় দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আপামর জনতার প্রিয় নায়ক।

নায়ক মান্নার প্রতি তার সহকর্মীরা আজও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে কথা বলেন। তার অভিনীত বহু জনপ্রিয় সিনেমার নির্মাতা কাজী হায়াৎ একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মান্না পোড় খেতে খেতে চলচ্চিত্রে বড় হয়েছে। একটি সিনেমা মুক্তির পর হলে পড়ে থাকত, সিনেমা না চললে কাঁদত। যেন পরীক্ষায় ফেল করেছে। এমনই নিবেদিত ছিল সে।”

তিনি আরও বলেন, “‘আম্মাজান’ সিনেমাটি মান্নার ক্যারিয়ারে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। সিনেমাটির ‘আম্মাজান’ গানটির শুটিংয়ে সে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিল যে সেটে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিল।”

১৯৬৪ সালের এই দিনে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্মগ্রহণ করেন মান্না। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। প্রথমবার পর্দায় দেখা যায় আজহারুল ইসলাম খানের পরিচালনায় ‘তওবা’ সিনেমায়। এরপর কাজী হায়াতসহ দেশের খ্যাতনামা নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করে একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দেন তিনি।

প্রায় ২৪ বছরের অভিনয়জীবনে মান্না তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অধিকাংশ চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে সমাজের বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের কথা। সে কারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের ‘জনতার নায়ক’।

তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—‘তেজী’, ‘আম্মাজান’, ‘আব্বাজান’, ‘বীর সৈনিক’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘দাঙ্গা’, ‘ভাইয়া’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘খল নায়ক’, ‘সুলতান’, ‘বিগবস’, ‘নায়ক’, ‘আমি জেল থেকে বলছি’, ‘জনতার বাদশা’, ‘রাজপথের রাজা’, ‘টোকাই রংবাজ’ প্রভৃতি।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায়, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন মান্না। তবে তার কাজ, তার অভিনয় আর মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকা ভালোবাসা আজও তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। যুগের পর যুগ চলচ্চিত্রপ্রেমীরা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে যাবেন এই কিংবদন্তি নায়ককে।