বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে তিনবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ববিতা এ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে ববিতাকে আজীবন সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সরকার।
মনেপ্রাণে একজন অভিনয়শিল্পী হলেও কেন অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন, সম্প্রতি সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
জানালেন, মৌলিক গল্পের অভাব। অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা তার কাছে গিয়েছেন, গল্প শুনিয়েছেন। কিন্তু সেসব গল্প ভালো লাগেনি অভিনেত্রী ববিতার। তবে কি গল্পের অভাবে আর অভিনয় করা হবে না এই ববিতার?
ভারতের উদাহরণ টেনে ববিতা বলেন, ‘পাশের দেশে তাকালেই দেখা যায়, তাদের কিংবদন্তী অভিনয়শিল্পীদের কেন্দ্র করে সিনেমার জন্য গল্প লেখা হয়। গল্পের মাধ্যমে সেই শিল্পী সিনেমার প্রাণ হয়ে ওঠেন। তরুণরাও সেই শিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করে সিনেমাটিকে অলংকৃত করে তোলেন। একজন কিংবদন্তীর সঙ্গে প্রবল আগ্রহ নিয়ে অভিনয় করেন তরুণ শিল্পীরা। আমরা প্রাণভরে তা উপভোগ করি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সে রকম সিনেমা বানানোর সাহস পান না নির্মাতারা।’
বাংলাদেশের অভিজ্ঞ শিল্পীদের কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেছেন অভিনেত্রী ববিতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে এখনো ভালো ভালো গল্পের সিনেমা হতে পারে। অথচ তাদের অনেকেই আমার মতো বহু বছর সিনেমায় অভিনয় করছেন না। আমরা আমাদের অভিজ্ঞ শিল্পীদের কাজে লাগাতে পারছি না। আমার আফসোস হয়, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটি ভালো মৌলিক গল্প পেলাম না, যাতে আমি মনপ্রাণ দিয়ে অভিনয় করতে পারি। হয়তো সেই সময় আসবে, জানি না সেটা কবে।’
বর্তমানে সন্তানদের সঙ্গে কানাডায় থাকেন ববিতা। মাঝেমধ্যে ঢাকায় নিজের বাড়িতে বেড়াতে আসেন তিনি। কানাডা থেকে ঢাকার গণমাধ্যমকে এই অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এখনো তার সিনেমায় অভিনয় করার আগ্রহ আছে। তবে মনের মতো গল্পের অভাবে করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘গত প্রায় দশ বছরে অনেক নির্মাতাই আমাকে গল্প শুনিয়েছেন। কিন্তু কারো গল্পই আসলে আমার মন ছুঁয়ে যায়নি, যাতে আমি অভিনয় করার আগ্রহ পাব। আমি মনেপ্রাণে একজন চলচ্চিত্রাভিনেত্রী।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি অভিনয় করে যেতে চাই। কিন্তু গত দশ বছরে একটি ভালো গল্পের সিনেমায় অভিনয় করার সেই সুযোগ এলো না আমার!
এখনো অপেক্ষায় আছেন ববিতা। হয়তো খুব ভালো একটি গল্প নিয়ে কেউ গিয়ে হাজির হবে তার কাছে। আবারও ক্যামেরার সামনে গিয়ে দাঁড়াবেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করার পর থেকে বহু ব্যবসাসফল সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। সেসবের মধ্যে রয়েছে ‘টাকা আনা পাই’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘নয়নমনি’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’। উপমহাদেশের খ্যামিতান নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের নির্দেশনায়ও কাজ করেছেন তিনি। ‘অশনি সংকেত’ নামের সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ভারতের প্রয়াত খ্যাতিমান তারকা অভিনেতা সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়।