সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ স্থগিত, হামলাকারীদের নামে মামলা

খেলায় অংশ নেওয়া তারকাদের এককাংশ

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে বসেছে শোবিজ তারকাদের অংশগ্রহণে ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের’ আসর। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে হঠাৎ করেই শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘটে যায় তুলকালাম কাণ্ড। নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিমের খেলা চলার সময়ে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ জন তারকা। এরই মধ্যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাময়িক বন্ধ সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগ।

শনিবার (৩০ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যায় মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে আয়োজকরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আরশাদ আদনান জানান, ঘটনার পিছনে রাজ কিংবা দীপন কেউই দায়ী না। ঘটনার তদন্তে তারা পেয়েছেন কিছু সমর্থকদের তারা দলগুলোর জার্সি দিয়েছিলেন। তাদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।

আয়োজকদের দাবি ঘটনাটি এক মিনিটেরও কম সময়ে ঘটেছে। তবে মাঠে থাকা ক্যামেরা ও বিভিন্ন চ্যানেলের ফুটেজ বিশ্লেষণ করা তারা দোষীদের শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে ৩-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আয়োজকরা।তবে কার কার বিরুদ্ধে, কোন থানায় মামলা করা হয়েছে, সেটা প্রকাশ করা হয়নি।

তারা বলেন, আমরা যদি দেখি একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে তাদের আচরণের পজেটিভ পরিবর্তন হয়েছে তাহলে নামগুলো প্রকাশ করবো না। আর যদি দেখি আগের মতো রয়েছে তাহলে তখন নাম প্রকাশ করবো।

মামলায় আসামীর তালিকায় চার-পাঁচ জনের নাম রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেন আয়োজকদের মুখপাত্র। প্রেস কনফারেন্সের এক পর্যায়ে দল দুটির অন্য সদস্যদের মধ্যে মিটমাট করে দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দুই অধিনায়ক রাজ ও দীপন

আয়োজনটি যেখানে বন্ধ হয়েছে সেখান থেকে শুরু হবে, নাকি নতুন করে শুরু হবে, আবার শুরু হলে দু-একদিনের মধ্যে হবে নাকি ২০-২৫ দিন পর নতুন করে আবার হবে তা খুব শিগগিরই জানানো হবে বলে আয়োজকরা জানান।

নিজের দলের হয়ে ক্ষমা চান নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। তিনি বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত ও ক্ষমা প্রার্থী। আমার দল থেকে যারা জড়িত ছিল, তাদের পক্ষ থেকেও আমি সরি, লজ্জিত। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমরা একই পরিবারের সদস্য, তাই ইন্টারনালি সমাধান করেছি। এতে আমার দ্বিমত নেই।’

নির্মাতা দীপংকর দীপন বলেন, ‘কালকে (২৯ সেপ্টেম্বর) যে ঘটনা ঘটেছে, এটা আমাদের সংস্কৃতি সমাজের কোনও রকম প্রতিফলন নয়। আমাদের দুই দলে যে প্লেয়ার ছিল, আমরা মারামারিতে জড়াইনি। মাত্র চার-পাঁচ জন এসে আমাদের হামলা করেছে। কিছু মানুষ মারতে এসেছিল, বাকি সবাই ঠেকিয়েছিল। তারা সাপোর্টার জার্সি পরিহিত ছিল। আমাদের একজন প্লেয়ার মনোজকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আমার একজন অ্যাসিস্ট্যান্টকে টেনে নিয়ে মাটিতে ফেলে পাড়ানো হয়েছে। আমরা বিস্মিত হয়ে গেছি! এরা কারা? কোত্থেকে এলো? ঘটনার পরই কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি, এটার সুরাহা না করলে আমরা মাঠ ত্যাগ করবো না। তারা আমদের কাছে এক দিন সময় চেয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ যে, এর মধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছেন।’

একই দলের অভিনেতা মনির খান শিমুল বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারে কিছু ব্ল্যাকশিপ তৈরি হয়েছে। শুধু বাইরের পরিবেশে না, আমাদের ভেতরেও দু’চারটা ব্ল্যাকশিপ আছে। সবাই তো শিল্পী না, পারফর্মারও আছে অনেক। এখানে মারামারি হয়েছে বলবেন না। আমার ভাইয়েরা মার খেয়েছে। আমার দুষ্টু ভাইয়েরা ভদ্র ভাইদের মেরেছে। দুইটাই আমার ভাই। আমরা মারামারি করতে চাই না, খেলে জিততে চাই।’

শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে মোস্তফা কামাল রাজের দল। নির্ধারিত ছয় ওভারে ১১৯ রান সংগ্রহ করে তারা। দীপঙ্কর দীপনের টিম বিরাট রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সমানুপাতিক হারেই রান তুলছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৭ রানে হেরে যায় তারা। দলটি নির্ধারিত ৬ ওভারে ১১২ রান করে। ম্যাচ শেষেই ঘটে মারামারির ঘটনা।

‘সেলিব্রেটি ক্রিকেট লীগ’প্রায় দু সপ্তাহ প্র্যাকটিস শেষে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজনের পর্দা নামবে ৩০ সেপ্টেম্বর।

এই সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগে (সিসিএল) মোট আটটি দলে ভাগ হয়ে লড়ছেন শোবিজের কলাকুশলীরা। প্রতি দলে নারী-পুরুষ তারকারা অংশ নিচ্ছেন। এসব দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন, গিয়াসউদ্দিন সেলিম, সালাহউদ্দিন লাভলু, শিহাব শাহীন, চয়নিকা চৌধুরী, দীপঙ্কর দীপন, সকাল আহমেদ, মোস্তফা কামাল রাজ ও রায়হান রাফী।