আগামী ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মিশা সওদাগর ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল এক প্যানেল থেকে নির্বাচন করবে। তাদের বিরোধী প্যানেলে কে থাকছে তা নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা কল্পনা। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজ প্যানেলের সভাপতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন চিত্রনায়িকা ও আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুণ আক্তার।
শাকিব খান, মৌসুমী, ফেরদৌস, অনন্ত জলিলসহ বেশ কয়েকজন নিপুণের প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী হতে রাজি হননি। তখন বেশ ঘটা সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক মাহমুদ কলি শিল্পী সমিতির নির্বাচনে তার প্যানেল থেকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করবেন।
নতুন খবর হচ্ছে মাহমুদ কলির প্রার্থিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
মাহমুদ কলি দীর্ঘদিন ধরে সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় তাকে সাধারণ সদস্য দেখানো হয়েছে। সমিতির গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) অনুযায়ী আজীবন সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না। করতে হলে তাকে আজীবন সদস্য পদত্যাগ করে সাধারণ সদস্য হতে হবে।
এ ইস্যুতে বলা হচ্ছে, আজীবন সদস্যপদ থেকে আবার সাধারণ সদস্যপদে ফেরত যেতে হলে সাধারণ সদস্যদের মিটিংয়ে উত্থাপনের মাধ্যমে পাশের নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে তার ব্যতয় ঘটেছে।
শিল্পী সমিতির ২০২১-২৩ মেয়াদের কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পাদক জয় চৌধুরী বলেন, ২ বছর মেয়াদে কিংবা সবশেষ তিনটা মিটিংয়ের তিনটাতেই আমি ছিলাম সেখানে মাহমুদ কলি সাহেবে আজীবন সদস্যপদ থেকে সাধারণ সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তা শুনেনি। এধরণের আলোচনা হয়নি কোনো মিটিংয়ে।
গেলো কমিটির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তারকে এ ইস্যুতে বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। তাদের দুজনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রযোজক ও নির্মাতা এ জে রানা। তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকায় আমরা তাকে (মাহমুদ কলি) সাধারণ সদস্য হিসেবে পেয়েছি। তাই আইন আনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ নেই। কোনো অনিয়ম বা ভুল হয়ে থাকলে সেটার দায়ভার শিল্পী সমিতির আগের কমিটির। তারা কীভাবে পাশ করেছে, তা তো আমরা জানি না।’
কোনো অনিয়মের মাধ্যমে সাধারণ সদস্য হয়েছেন মানতে নারাজ মাহমুদ কলি। বর্ষীয়ান এ নায়ক বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই শিল্পী সমিতিতে আবেদন করেছিলাম এবং তারা সেটা পাশ করেছে। আমার আগে যারা আজীবন সদস্য ছিল তারা যেভাবে নির্বাচন করেছে তাদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা হয়েছে আমার ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। কোনো ব্যতয় ঘটেনি’।
তবে কবে আবেদন করেছিলেন এবং কবে আজীবন সদস্য থেকে সাধারণ সদস্য হয়েছেন তা জানাতে রাজি হননি। উত্তরে তিনি বলেন, আপনি সমিতির অফিসে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।
উল্লেখ্য, মাহমুদ কলি ছিলেন আশি ও নব্বই দশকের নায়ক। দীর্ঘদিন তিনি রূপালী পর্দায় দর্শক মাতিয়েছেন। তার পারিবারিক নাম মাহমুদুর রহমান উসমানী। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান বুলি’র ছোট ভাই। মূলত ভাইয়ের হাত ধরেই তিনি চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুন্সিয়ানা।
মাহমুদ কলি’র প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাস্তান’। তিনি এই চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে অশোক ঘোষ নির্মিত ‘তুফান’ চলচ্চিত্রে মূল নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেন। মাহমুদ কলি ৬১টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে ২টি সিনেমা মুক্তির মুখ দেখেনি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘গোলমাল’, ‘নেপালি মেয়ে’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘সুপারস্টার’, ‘গ্রেফতার’, ‘খামোশ’, ‘মহান’, ‘দেশ বিদেশ’, ‘মা বাপ’ ইত্যাদি।
১৯৯৪ সালে নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পায়। এর নাম ছিলো ‘মহাগ্যাঞ্জাম’। তবে ২০০২ সালে তাকে আবারও দেখা গিয়েছিলো ‘আবার একটি যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি উকিল চরিত্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।
১৯৯৭ সালে তিনি টিভি নাটক নির্মাণেও নাম লেখান। ‘তাদের কথা’ নামি ছিলো তার প্রথম নাটকের। এরপর তিনি ‘আলোকিত আঙ্গিনা’ নামে আরও একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মান করেন।