শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শিল্পীদের বিক্ষোভ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শিল্পীরা। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নানা ব্যানার নিয়ে তারা ফার্মগেটে সমবেত হন তারা। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে। তবে পুলিশি বাধার কারণে ফার্মগেটে সেজান পয়েন্টের সামনে অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক- এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সেখানকার চারপাশ। তাছাড়া বিভিন্ন গান গেয়েও নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানানোর এই সমাবেশে মামুনুর রশীদ, মোশাররফ করিম, আজমেরী হক বাঁধন, সাবিলা নূর, আশফাক নিপুণ, নুরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা, পিপলু আর খান, শিবু কুমার শীল, রেদওয়ান রনি, জাকিয়া বারী মম, সোহেল মণ্ডল, সিয়াম আহমেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘দেখুন আমিও কিন্তু অন্য অনেকের মতো এই রাষ্ট্র বা সরকারের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একজন মানুষ। এই সরকারের আমলেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো ফিরে পেয়েছি। যেমন আদালত থেকে বাচ্চার অধিকার পেয়েছি, যেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটলো। এই সরকারের আমলেই আমি সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এর বাইরে ক্যারিয়ার বিচারে আমি সর্বোচ্চ সফল সময় পার করছি এখন। আমার তো দরকার ছিল না সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় এসে স্লোগান ধরার। বাকি জীবনটা আমি খুব আরামেই কাটাতে পারি চুপচাপ। প্রশ্ন আসবে আরাম ফেলে কেন আমি এমনটা করছি? উত্তরও দিচ্ছি। আমি তো শুধু অভিনেত্রী নই। এর বাইরেও আমি একজন মা, একজনের সন্তান এবং এই দেশের একজন সচেতন নাগরিক। যে বাচ্চাটা ছাদে খেলতে গিয়ে খুলি খেয়ে মরে গেলো, সে তো আমারও মেয়ে হতে পারতো। তখন কি আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এর বিচার চাইতাম না? যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেলো এবং ঘটছে, সেটির বিচার কি আমি চাইবো না? যদি না চাই, তাহলে তো আমি এই রাষ্ট্রের কেউ না। অথবা বোধশূন্য অমানুষ। আমার মনে হয়েছে, এর প্রতিবাদ করা উচিত। না করলে কাল যখন আমার মেয়েটা গুলি খেয়ে মরে পড়ে থাকবে, তখন অন্য কেউ আমার পাশে দাঁড়াবে না। এবং এই গুলি চলতেই থাকবে। সেই বিবেচনায় বলা যায়, আমি আমার স্বার্থেই রাজপথে নেমেছি। এর বিনিময়ে আমাকে যত মূল্য দিতে হয়, দিবো। কিন্তু আমার কণ্ঠ থামাবো না।’

মোশাররফ করিম বলেন, ‘আমরা এখন ঘরে বসে থাকার মতো পরিস্থিতিতে নেই। আর একটা হত্যা, গুলি এসব দেখতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হত্যা, গোলাগুলি, রক্ত এগুলোর বাইরে আমরা থাকতে চাই। আমরা শান্তি চাই।’

নায়ক সিয়াম বলেন, ‘দেখেন আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন তাহলে সারা রাত ঘুমাতে পারবেন না। আমার কানে এখনও বাজে, কারও পানি লাগবে? এই যে এখন কত পানি আসছে! এইটা যতদিন মাথায় থাকবে আমরা ততদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরাতো সারাজীবন মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এককভাবে কাউকে দেখানোর জন্য আমরা কাজ করি না। যারা আমাদের ভক্ত তাদের পাশে যদি এসময় না দাঁড়াতে পারি তাহলে আমাদের কাজ করার কোনো মানে নেই।’

সিয়ামের ভাষায়, ‘এই বাচ্চাগুলো কোনো অন্যায় দাবি রাখে নাই। এক একজন মায়ের আহাজারি; যার যায় সেই বোঝে। এর বিচার না হলে কেউ শান্তি পাবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.