বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। স্বাভাবিকভাবেই রাজধানী ঢাকায় তো বটেই, এর আশপাশের মহাসড়কগুলোতেও তীব্র যানজট। গাজীপুর থেকে সেই তীব্র যানজট ঠেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বসুন্ধরা সিটিতে পৌঁছান মারুফ। লক্ষ্য ছিল, স্টার সিনেপ্লেক্সে সন্ধ্যা ৭টায় শাহরুখ খানের ‘জাওয়ানে’র প্রথম শো দেখবেন। যানজটে পৌঁছাতে আধা ঘণ্টা দেরিতে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় মারুফের। বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়ান পরের দিনের টিকিটের জন্য। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে যখন মারুফের হাতে টিকিট, তখন ঘড়ির কাঁটায় সময় রাত ১০টা!
টিকিটের জন্য প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলেও মারুফের চোখেমুখে বিরক্তি নয়, বরং খেলা করছিল উচ্ছ্বাস। প্রথম শো মিস করলেও দ্বিতীয় দিন শুক্রবারই (৮ সেপ্টেম্বর) যে বহুল প্রতীক্ষিত জাওয়ান ছবিটি দেখার সুযোগ পাবেন!
সেই খুশিতে ফোন দিয়েছিলেন একজন বন্ধুকে। বলছিলেন, ‘মাম্মা, টিকিট তো পাইয়া গেছি,… হ… দুটা।’
শুধু মারুফ নন, জাওয়ানের টিকিটের জন্য বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকিট কাউন্টারে ভিড় জমিয়েছিলেন শতাধিক শাহরুখ ভক্ত। কখন কয়টি শো করা সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত হতে না পারায় শুরুতে সিনেপ্লেক্স কোনো টিকিট দিতে চায়নি। তারা টিকিটের জন্যই শুক্রবার আসতে বলছিলেন দর্শকদের। তবে শাহরুখ ভক্তরা নাছোড়বান্দার মতো দাঁড়িয়েছিলেন টিকিট কাউন্টারে। একসময় সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও শো টাইম নিশ্চিত হয়ে যায়। তখন শুরু হয় টিকিট বিক্রি।
স্টার সিনেপ্লেক্সে মিরপুর থেকে এসেছিলেন অর্ণব। বললেন, আমরা পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে। আজ শো চলছে। অথচ তারা বলছে, কালকের টিকিট দিতে পারবে না। আবার বলছে, টিকিট দিলেও শো কখন হবে, তা বলতে পারছে না।
সিনেপ্লেক্সের কর্মীরা জানালেন, শো টাইম নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই শুরুতে টিকিট বিক্রি করতে পারছিলেন না তারা। পরে ভক্তদের দাবির মুখে শুক্রবার বিকেল ৩টার শোয়ের জন্য টিকেট ছাড়ে স্টার সিনেপ্লেক্স। এরপর আরেকটি শোয়ের টিকেট ছাড়ে।
হলটির একজন কর্মকর্তা কারণ জানিয়ে বলেন, আসলে ভারতীয় ছবি কেডিএম সার্ভার থেকে চালাতে হয়। তার জন্য পাসওয়ার্ড লাগে। সেটি আসতে দেরি হওয়ায় আমরা শো টাইম জানাতে পারছিলাম না। আর শো টাইম ছাড়া তো টিকিট বিক্রি করা সম্ভব হতো না।
ওই কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখাতেই ১৪-১৫টি শো চলবে ছবিটির। ‘জাওয়ান’-এর রান টাইম ২ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট। তারা পুরো ছবিই চালাবেন। নিজেরা কোনো অংশ কাটবেন না।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘জাওয়ানে’র প্রথম শো চালানো হয় স্টার সিনেপ্লেক্সে। প্রাথমিকভাবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাটের লক্ষ্য ছিল সন্ধ্যা ৬টায় শো চালানোর। সেন্সর শো শেষে সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া, এরপর ভারত থেকে সার্ভারের পাসওয়ার্ড পাওয়াসহ নানা জটিলতায় সেই সময় পরে পিছিয়ে যায়। তারপরও ভারতের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে বলিউডের কিং খানখ্যাত শাহরুখ খানের এই সিনেমা।
এর আগে বুধবার জাওয়ানের সেন্সর শো হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা কারণেই সেটি বুধবার হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সেন্সর শো শুরু জহয়। শো শেষ করে জাওয়ানকে বিনা কর্তনে ছাড়পত্র দেন সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা। এরপরই স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা ও এসকেএস টাওয়ার এবং ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে স্পেশাল শোয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হয় জাওয়ান।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি চুক্তি ‘সাফটা’র আওতায় বাংলাদেশে ‘জাওয়ান’ ছবিটি আমদানি করেছে অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ‘নবাব এলএলবি’।