চলচ্চিত্র শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা গুণী শিল্পীদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালের সিনেমা থেকে এ বছর ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩২টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দর্শকসারিতে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। আরও বক্তব্য দেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা খসরু (বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আলম খান খসরু) ও অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা। অভিনেতা খসরু দেশের বাইরে থাকায় তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন নায়ক আলমগীর।
মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম প্রযোজিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ও মো. তামজিদ উল ইসলাম প্রযোজিত ‘পরাণ’ যুগ্মভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ‘শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হয়েছে এস এম কামরুল আহসানের ‘ঘরে ফেরা’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ড. এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া পরিচালিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক’ হয়েছেন সৈয়দ রুবাইয়াত হোসেন ‘শিমু’র জন্য।
‘হাওয়া’ ছবির জন্য চঞ্চল চৌধুরী শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার (প্রধান চরিত্র) পেয়েছেন। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার (প্রধান চরিত্র) পেয়েছেন জয়া আহসান (বিউটি সার্কাস) ও রিকিতা নন্দিনী শিমু (শিমু)। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার (পার্শ্ব চরিত্র) পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মাদ নাসির খান ‘পরাণ’ ছবির জন্য। ‘পাপ পূণ্য’ ছবিটির জন্য আফসানা করিম (আফসানা মিমি) পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পার্শ্ব চরিত্র) পুরস্কার। খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ (অভিনেতা/অভিনেত্রী) পুরস্কার পেয়েছেন সুভাশিষ ভৌমিক, ‘দেশান্তর’ ছবির জন্য।
কৌতুকে শ্রেষ্ঠ (অভিনেতা/অভিনেত্রী) পুরস্কার পেয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম (দিপু ইমাম) ‘অপারেশন সুন্দরবন ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী পুরস্কার যুগ্মভাবে পেয়েছেন বৃষ্টি আক্তার (রোহিঙ্গা) ও মুনতাহা এমিলিয়া (বীরত্ব)। শিশুশিল্পী শাখায় ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র জন্য মোছা. ফারজিনা আক্তারকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক পুরস্কার পেয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম খান (রিপন খান), ‘পায়ের ছাপ’ ছবির জন্য। শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা (বাপ্পা মজুমদার) ‘অপারেশন সুন্দরবন’ (এ মন ভিজে যায়..)’ ও চন্দন সিনহা ‘হৃদিতা’ (‘ঠিকানা বিহীন তোমাকে..)’ গানের জন্য।
শ্রেষ্ঠ গায়িকা পুরস্কার পেয়েছেন আতিয়া আক্তার আনিসা ‘পায়ের ছাপ’ ছবির ‘এই শহরের পথে পথে’ গানের জন্য। শ্রেষ্ঠ গীতিকার পুরস্কার পেয়েছেন রবিউল ইসলাম জীবন ‘পরাণ’ ছবির ‘ধীরে ধীরে তোর স্বপ্নে…’ গানের জন্য। শ্রেষ্ঠ সুরকার পেয়েছেন শওকত আলী ইমন ‘পায়ের ছাপ’ ছবির জন্য ‘এই শহরের পথে পথে’ গানের জন্য।
যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার পুরস্কার পেয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগর (দামাল) ও খোরশেদ আলম খসরু (গলুই)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হয়েছেন ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’র মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম। এস এ হক অলিক ‘গলুই’র জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক হয়েছেন সুজন মাহমুদ ‘শিমু’ ছবির জন্য। ‘রোহিঙ্গা’ ছবির জন্য হিমাদ্রি বড়ুয়া শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক পুরস্কার পেয়েছেন। আসাদুজ্জামান মজনু ‘রোহিঙ্গা’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক পুরস্কার পেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক পুরস্কার পেয়েছেন রিপন নাথ ‘হাওয়া’র জন্য।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা পুরস্কার পেয়েছেন তানসিনা শাওন ‘শিমু’ ছবির জন্য। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির জন্য মো. খোকন মোল্লা পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ মেকআপ-ম্যান পুরস্কার।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ প্রদানের লক্ষে গত মার্চ মাসে ছবি আহ্বান করা হয়। গঠন করা হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জুরি বোর্ড। সেখানে জমা পড়ে ৩৭টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ১৯টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। জুরি বোর্ডের সদস্যরা মোট ৮০টি সভা করেন।
পুরস্কার বিতরণী শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশনা করেন জায়েদ খান, আঁচল, সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি, তমা মির্জা। ছিল সাইমন-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূরের পরিবেশনাও।