সকাল তখন সাড়ে ১১টা। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স থেকে আহমেদ রুবেলের মরদেহ নামানোর পরপরই ঘিরে ধরেন সবাই। এরপর একে একে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেন। শত্তিমান এ অভিনেতার মরদেহ শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কর্মময় জীবন সম্পর্কে সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন সহকর্মী ও অনুরাগীরা। অনেকেই আবেগ আল্পুত হয়ে পড়েন।
ঢাকা থিয়েটারের পক্ষে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ১৯৮৭ সালে রুবেল ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেয়। এরপর থেকে তিনি আমাদের সক্রিয় সদস্য। আজকের এ শ্রদ্ধা নিবেদন শুধু ঢাকা থিয়েটারের নয়, বরং তাকে বিদায় জানাচ্ছে দেশের সব থিয়েটারকর্মী।
নির্মাতা মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, যতজন শেখ মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেন আমার কাছে মনে রুবেলই পারফেক্ট ছিল। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলে কথা বলে শেষ করা যাবে না।
শ্রদ্ধা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরে। সেখানে উত্তর ছায়াবীথি, জোড় পুকুরে আসর বাদ হবে অভিনেতার দাফন।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তার অভিনীত ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ছিল। এ প্রদর্শনীতেই যোগ দিতে রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে এসেছিলেন আহমেদ রুবেল। সেখানে লিফটে ওঠার সময় হুট করে মাথা ঘুরে পরে যান তিনি। দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই রুবেলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে যাচ্ছে এই অভিনেতার ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমা। সন্ধ্যায় সিনেমাটির বিশেষ প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসে দর্শকদের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখার কথা থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।
আহমেদ রাজিব রুবেল ওরফে আহমেদ রুবেল ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আয়েশ উদ্দিন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ইসলামপুর মহল্লায় তাঁর মাতুলালয় (নানির বাড়ি)। পিতা–মাতার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে হলেও ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন ঢাকা শহরে, বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
সেলিম আল দীনের ‘ঢাকা থিয়েটার’ থেকে আহমেদ রুবেলের অভিনয়ের হাতেখড়ি। আহমেদ রুবেল অভিনীত প্রথম নাটক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নযাত্রা’। এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের ঈদনাটক ‘পোকা’–তে অভিনয় করেন, যেখানে তার অভিনীত চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
এরপর একুশে টেলিভিশনের ধারবাহিক নাটক ‘প্রেত’-এ অভিনয় করেন। ‘প্রেত’ নাটকটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এর পরিচালক আহির আলম।
এ ছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমায় অভিনয় করেন।