ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা: সংস্কৃতি ব্যক্তিদের প্রতিবাদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজধানীর মিরপুরে মাহফুজ আলম শ্রাবণের মৃত্যুর ঘটনায় অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ২০ এপ্রিল নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।

মামলার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইরেশ যাকেরের সহকর্মী ও ভক্তরা। অনেকেই বলছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা ছিলেন ইরেশ। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায় তারা হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে সবকিছুর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেই না। তবে কখনো কখনো নীরবতা যেন বিশ্বাসঘাতকতার মতো অনুভূত হয়। ইরেশ যাকের সবসময় সত্যের পক্ষে ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন।”

বাঁধন আরও জানান, “৪ আগস্ট, কারফিউর দিনে আমরা শাহবাগে একসঙ্গে ছিলাম। ঝুঁকির মাঝেও ইরেশ নিশ্চিত করেছিলেন আমি যেন নিরাপদে কালশি ফ্লাইওভারে পৌঁছাতে পারি। সেদিন গণভবনে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ থাকলেও ইরেশ তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি ছাত্রদের পাশে, সত্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।”

ইরেশের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁধন বলেন, “তাকে হয়রানির শিকার হতে দেখে মন ভেঙে যাচ্ছে। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোদের বারবার নিপীড়িত হতে দেখেছি। তবুও, এটি এখনও গভীরভাবে কষ্টদায়ক। যারা সত্যের পাশে থাকে, তাদের রক্ষা করা উচিত, নিপীড়ন নয়। আমরা ইরেশের পাশে আছি।”

পরিচালক শিহাব শাহীন লিখেছেন, “ইরেশ যাকের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা!”

পরিচালক আশফাক নিপুণ বলেন, “১ আগস্ট ফার্মগেটে আমাদের সঙ্গে ইরেশ ও তার স্ত্রী পুরোটা সময় ছিলেন জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। তিনি শোক প্রকাশের জন্য বিটিভি ভবনেও যাননি। তার প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত চলুক, কিন্তু তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হাস্যকর। গায়েবি মামলায় আসল অপরাধীরা যেন রক্ষা না পায়, সরকারকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

জনপ্রিয় রেডিও জকি ও ইউটিউবার আরজে কিবরিয়া বিস্ময় প্রকাশ করে লেখেন, “ইরেশ যাকের হত্যা মামলার আসামি! এই লিস্টগুলো বানায় কারা? তারা কি সত্যিকারের বিচার চায়?”

অন্যদিকে, সংস্কৃতি বিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমি এখন সরকারের অংশ। আগে অ্যাকটিভিস্ট ছিলাম, এখন কাজ করতে হয়। ইরেশ যাকেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। জুলাই আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তাই এই মামলা গভীরভাবে পীড়াদায়ক।”
তিনি আরও বলেন, “মামলা করেছেন একজন ব্যক্তি, এটি রাষ্ট্রপক্ষের মামলা নয়। স্বাধীন দেশে মামলা করার অধিকার সবার আছে, তবে কেউ কেউ এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করছেন। আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ সঠিক তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published.