উদিত নারায়ণ, ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গীত ভুবনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র— বিশেষ করে বলিউড তথা হিন্দি গানে তার অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত। অনেক জনপ্রিয় গান গেয়েছেন আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত। নেপালের অধিবাসী এই মানুষটি ভারতের পদ্মশ্রী,পদ্মভূষণ শুরু করে থেকে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ফিল্মফেয়ার পেয়েছেন মোট পাঁচবার।
কিংবদন্তি এ শিল্পী ৬৩ পার করে ৬৪ তে পা দিলেন। ১ ডিসেম্বর ১৯৫৫ তে নেপালের বারোদা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে রইলো শুভকামনা।
এ বিশেষ দিনে তারকা সংবাদ’র পাঠকদের জন্য তার গাওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে থেকে অন্যতম সেরা দশটি গান এই নিয়ে বিশেষ আয়োজন।
ম্যায় ইয়াহ হু ইয়াহ
বলিউডের অন্যতম সেরা রোমান্টিক সিনেমা ‘বীর জারা’। সেখানেই ব্যবহৃত হয়েছিল ‘ম্যায় ইয়াহ হু ইয়াহ’। এ গানে শাহরুখ-প্রীতির রসায়ন বেশ জমজমাট ছিল। জাভেদ আখতারের কথা ও মদন মোহনের সুরের উদিত নারায়ণের সুমিষ্ট কণ্ঠ আজো বিমোহিত করে দর্শক-শ্রোতাদের।
পেহলা নাশা
আমির খান ও আয়শা জুলখার ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ সিনেমার এই গানে যে কেউ এখনও হারিয়ে যেতে যেন বাধ্য। মজরু সুলতানপুরির কথায় যতিন-ললিতের সুরে গানটি উদিত নারায়ণের অন্যতম সেরা কাজ। এতে তার সঙ্গী হয়েছিলেন সাধনা সারগম।
চান্দ ছুপা বাদাল মে
সঞ্জয় লীলা বানশালির এখন পর্যন্ত সেরা মিউজিক্যাল সিনেমা ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’। এই সিনেমার সম্ভবত সেরা শৈল্পিক গান এটি। মেহবুবের কথায় ও ঈসমাইল দরবারের সুরে গানটিতে ছিল সালমান খান ও ঐশ্বরিয়ার স্ক্রিণ রসায়ন। বানশালীর শিল্প নির্দেশনা সঙ্গে উদিত নারায়ণ-অলকা ইয়াগনিকের কণ্ঠ, সবমিলিয়ে এই গানটি যেন মনিকাঞ্চন যোগ হয়েছিল। উদিত নারায়ণ গানটির জন্য ‘ফিল্মফেয়ার’ লাভ করেন।
মিতয়া
বলিউডের অন্যতম সেরা খেলাবিষয়ক সিনেমা ‘লাগান’। ব্রিটিশবিরোধী সিনেমাটির এ গান বেশ উজ্জীবিত করে সবাইকে। জাভেদ আখতারের কথায় সুর করেন এ আর রহমান। ‘মিতয়া’র জন্য তিনি প্রথমবারের মত ভারতের ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ পান।
অবশ্য একই বছর ‘দিল চাহাতা হে’র ‘জানে কিউ লোগ’ গানের জন্যও যৌথভাবে এই পুরস্কার পান। দুটাই ছিল আমির খান অভিনীত অন্যতম সেরা সিনেমা।
‘মিতয়া’র জন্য ‘ফিল্মফেয়ার’ও পেয়েছিলেন। গানটিতে তার সহশিল্পী ছিলেন সুখিন্দর সিং, অলকা ইয়াগনিক। ‘লাগান’-এ আরো দুটি গান গেয়েছিলেন— বেশ শ্রোতাপ্রিয়।
ইয়ে তারা ও তারা
জাভেদ আখতার ও এ আর রহমানের সঙ্গে আবারও জুটি বাঁধেন এই গানে— আবারও আসে জাতীয় পুরস্কার। শাহরুখ খান অভিনীত অন্যতম সেরা সিনেমা ‘স্বদেশ’র এই গানটি তার অন্যতম সেরা গান হিসেবে বিবেচিত। এই গান দিয়েই তিনি সর্বশেষ ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’-পান। এটিতেও ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন।
অ্যা মেরা হামসাফার
আবারও উদিত নারায়ণ-অলকা ইয়াগনিক জুটি। তাদের তুমুল জনপ্রিয় গান এটি। মজরু সুলতানপুরির কথায় আনন্দ মিলন্দের সুরে এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছিল আমির-জুহি জুটির ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সিনেমার সবকটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন উদিত নারায়ণ— সবগুলোই জনপ্রিয়। এ সিনেমার ‘বাবা কেহতে হে’ গানের জন্য তিনি প্রথমবারের মত ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার লাভ করেন।
তেরে নাম
‘তেরে নাম’ সিনেমাটিতে সালমান সবচেয়ে সেরা অভিনয় করেছেন বলা হয়। এর টাইটেল গানটিও উদিতের। সমীরের কথায় হিমেশ রেশমিয়ার সুরে এই গানে সহশিল্পী ছিলেন অলকা ইয়াগনিক। এ গানের জন্যও ‘ফিল্মফেয়ার’ জিতেন।
আয়ে হো মেরি জিন্দেগী মে
নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা ‘রাজা হিন্দুস্তানী’। সমীরের কথায় ও নাদিম-শ্রাবণের সুরে উদিত নারায়ণের সুমধুর কণ্ঠে এই গানটিও অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমির-কারিশমা অভিনীত এই সুপারহিট সিনেমার সবগুলি গানই ছিল জনপ্রিয়— এরমধ্যে ‘পরদেশী’ গানের জন্য ‘ফিল্মফেয়ার’ পেয়েছিলেন।
কুচ কুচ হোতা হ্যায়
করন জোহরের সাড়া জাগানো ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’র শিরোনাম গানটিও সিনেমার মত সমান জনপ্রিয়। জাভেদ আখতারের কথায় যতিন-ললিতের সুরে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন অলকা-উদিত জুটি। অলকা ইয়াগনিক এই গানের জন্য ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ পেয়েছিলেন। এ সিনেমায় উদিতের গাওয়া অন্য গানগুলোও জনপ্রিয়। বিখ্যাত এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ-কাজল-রানী ত্রয়ী।
দিল তো পাগল হ্যায়
ইয়েশ চোপড়ার সুপারহিট সিনেমা ‘দিল তো পাগল হ্যায়’র এই গানটি ছিল সেই বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান। পুরো অ্যালব্যামও ছিল দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে। আনন্দ বক্সীর কথায় উত্তম সিংয়ের সুরে এই গানে উদিত নারায়ণের সহশিল্পী ছিলেন গানের সরস্বতীখ্যাত লতা মঙ্গেশকর। এই গানে দেখাগিয়েছিল জনপ্রিয় চার তারকা—মাধুরী দীক্ষিত, শাহরুখ খান, কারিশমা কাপুর ও অক্ষয় কুমার।
উদিত নারায়ণের অসংখ্য গান থেকে সেরা দশ গান বের করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরও তার প্রতি ভালোবাসা থেকে একটু চেষ্টা করা। এই গানগুলির বাইরে—দিল,মোহরা,ডর,মোহাব্বতে,কই মিলগ্যায়া সহ আরো বেশ কয়েকটি সিনেমার গান বিশেষভাবে উল্লেখ্য থাকবে।