১৯৭১ সালে জলপথে সফল গেরিলা যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা ‘অপারেশন জ্যাকপট’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রযোজনা করছে অন্তর শোবিজ ও পরিচালনায় আছেন কলকাতার রাজীব বিশ্বাস। এ সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বাপ্পী চৌধুরী। নতুন খবর হলো সিনেমাটিতে থাকছেন না তিনি।
অন্তর শোবিজের কর্ণধার স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘বাপ্পী চৌধুরীকে সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ করানো হয়েছিল। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করার জন্য তাকে সিনেমাটিতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
বাপ্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাদ না, তিনি নিজেই সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বাপ্পী বলেন, ‘অপারেশন জ্যাকপট সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম।
সবকিছু ঠিক ছিল, কিন্তু শুরুর দিকে আমাকে সিনেমাটির কর্তৃপক্ষ যেসব কথা বলেছিলেন, পরে তাঁদের সেই কথার সঙ্গে মিল পাইনি। তাই সিনেমাটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টরে পরিচালিত সফলতম গেরিলা অপারেশনের কাহিনি নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এ সিনেমায় কাজ করবেন বিনোদন জগতের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই পরিচিত জায়েদ খান ও নিপুণ।
স্বপন চৌধুরী জানান, চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এরই মধ্যে সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন জায়েদ-নিপুণ। তবে পর্দায় একসঙ্গে তাঁদের দেখা যাবে কি না, তা নিশ্চিত করেনি অন্তর শোবিজ।
জানা গেছে, ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এ শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করবেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। আর জায়েদ খানের চরিত্রটি নিয়ে থাকছে চমক। সিনেমায় তাদের একই ফ্রেমে হাজির করা হবে কি না, সেটিও চমক রাখতে চান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, খুব শিগগির সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে। টানা কাজ করে শেষ হবে এর চিত্রায়ন। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হবে বলে নির্মাতা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসেও অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৌ অপারেশনগুলোর একটি বলা হয়ে থাকে অপারেশন জ্যাকপটকে। অপারেশন জ্যাকপট ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নৌ কমান্ডোদের এক মরণকামড়। দেশপ্রেমে মরিয়া হয়ে সে বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী অপারেশন কেবল হানাদারদের বুকে কাঁপনই ধরায়নি, সাড়া ফেলে দিয়েছিলো গোটা পৃথিবী জুড়ে। ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সফল গেরিলা যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে ‘অপারেশন জ্যাকপট’।
এদিকে সিনেমাটি নির্মাণের শুরু থেকেই চলছে বিতর্ক। সে সময় কয়েকজন নির্মাতা অভিযোগ করেছেন, যেভাবে দরপত্রের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে এই কাজটি দেয়া হয়েছে, তা যথাযথ হয়নি।
বেশ কয়েক বছর আগে অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে প্রথম একটি চলচ্চিত্র তৈরির উদ্যোগ নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই সময় তারা চিত্র পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে চিত্রনাট্য তৈরির দায়িত্ব দেয়। পুরো প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
এরপর থেকে তিনি এ নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করেন। পরে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ তদারকির দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপরই তারা এই চলচ্চিত্র নির্মাণে দরপত্র আহ্বান করে।
সেই দরপত্রে অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজটি পায় ‘কিবরিয়া ফিল্মস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাতে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘আশীর্বাদ চলচ্চিত্র’ অংশ নিলেও, আবেদন ‘বিধিসম্মত না হওয়ায়’ তাদের বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম সে সময় অভিযোগ করেছেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রথম যখন এই উদ্যোগ নিয়েছে, শুরু থেকেই আমি চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হিসাবে যুক্ত রয়েছি। এ নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে আমি গবেষণা করছি। এরপর যখন সেটি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আসে, তখনো আমি পরামর্শ দিয়ে আসছি।
গত বছরের মধ্যভাগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় যে দরপত্র আহ্বান করেছিল, তাতে মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সেখান থেকেই কিবরিয়া ফিল্মকে কাজটি দেয়া হয়।
তবে নির্মাতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, টাকাপয়সার লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে এই কাজটি বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে।
চিত্রনাট্য কমিটির সদস্য মোরশেদুল ইসলাম সে সময় বলেন, ‘এখানে যা হয়েছে, তা হলো দুর্নীতি। অনেক টাকার কাজ, সেটা দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের দেয়া হয়েছে। টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া আর কোন কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না।’
কিবরিয়া ফিল্মসের প্রস্তাবিত অপারেশন জ্যাকপট চলচ্চিত্রে অভিনয় শিল্পীদের যে তালিকা দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন শাকিব খান, ওমর সানি, মোশাররফ করিম, মৌসুমী, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, রিয়াজ, নিপুণ, ববিতা, আহমেদ শরীফ, সুচরিতা, মিশা সওদাগর, সুচরিতা, চম্পা, ভারতের রাণী মুখার্জি, সানি দেওল, সুনীল শেঠি, ফারদিন খান, জয়া বচ্চনসহ আরও কয়েকজন। এর আগে এক সংবাদের জেরে সিয়াম আহমেদ জানান ছবিটির প্রস্তাব ফেলেও গ্রহণ করেননি তিনি।