কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে সিনেমা হল মালিকরা

এবারের ঈদে মুক্তি পায় পাঁচটি সিনেমা। সেগুলো হলো- ‘তুফান’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘ময়ূরাক্ষী’ ও ‘আগন্তুক’। সিনেমাগুলো মুক্তির পর থেকে হল মালিকরা বেশ ভালোই ব্যবসা করছিলেন। ঈদে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করছিল ঢাকাই সিনেমার মেগাস্টার শাকিব খানের ‘তুফান’।

প্রেক্ষাগৃহগুলোতে এক কথায় ঝড় তোলে সিনেমাটি। কিন্তু গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে চলছে কারফিউ। ফলে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মত দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেয় মালিকরা। আর তাই বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

হল মালিকরা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদ থেকে তারা ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছিলেন। নতুন করে আশার মুখ দেখেছিলেন। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তাদের সিনেমা হল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ধরণের ধাক্কা অপ্রত্যাশিত। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একই কথা বলেছেন প্রযোজকরা।

বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, যেহেতু কারফিউয়ের মধ্যে সিনেমা হল চালানোর অনুমতি নেই তাই আমরা হল বন্ধ রেখেছি। তাছাড়া দেশের ইন্টারনেট পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তাছাড়া এখন সবগুলো হল ডিজিটাল সিস্টেমে চলে। তাই হলের সার্ভারে কোন ছবি লোড কিংবা রিসিভ করা সম্ভব হবে না যদি না ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক করা হয়।

তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি দেশের চালু দেড় শতাধিক সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা। শুক্রবার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হল মালিকদের সমিতির তরফ থেকে পরবর্তী করণীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন জানান, দর্শক কম থাকায় ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের সকল শো তারা বাতিল করেছিলেন। এছাড়া ২০ জুলাই থেকে কারফিউয়ের কারণে হল বন্ধ। তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ টিকেট বিক্রি হয় অনলাইনে। যার কারণে ইন্টারনেট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া ছাড়া হল খুলে খুব একটা লাভ হবে না। তাছাড়া আমরা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি। কারণ সবার আগে আমাদের কাছে দর্শকদের নিরাপত্তা আগে।

তিনি আরও বলেন, শো বন্ধ করার আগে আমাদের হলে দেশি ‘তুফান’ ৫ম সপ্তাহে এসে ৪৫টি শো চলছিল। বেশিরভাগ শো হাউজফুল যাচ্ছিল। হলিউডের ‘ডেসপিকেবল মি ফোর’ ছবিটিও প্রচুর দর্শক পাচ্ছিল। ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ আমরা এখনও হিসেব করিনি।

তুফান ছবিটির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি তো কিছুটা হয়েছে। সবগুলো শো হাউজফুল যাচ্ছিল। দেশের এ পরিস্থিতিতে সকল ব্যবসায়ীই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তবে আমরা মনে করি, আমাদের ক্ষতির চেয়ে ছাত্রদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়।’

তিনি জানান, তার ছবিটি দেশে এ মুহূর্তে আপাতত প্রদর্শন বন্ধ থাকলেও বিশ্বের ১৫টি দেশে চলছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতের মধ্যে ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়। একপর্যায়ে সরকার গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.