বিটিভি ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ নিজ চোখে দেখলেন একদল শিল্পী, জানালেন প্রতিবাদ

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। গত ১৮ জুলাই চালানো এই হামলায় বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসিপশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ, ক্যান্টিনে, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।

বিটিভি ভবনে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্বিলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’- এই স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে তাদের মতপ্রকাশ করেন শিল্পীরা।

উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, নাট্যব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। বিটিভিতে এ ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা?- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সে কোটার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলবো কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো আর আমরা আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, আপনারা যদি দেখেন, বাচ্চারা যদি দেখে বুঝতে পারবে- সুপরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে। তাদের বিচার চাই। আজ আমরা সকল অঙ্গনের শিল্পীরা এখানে একত্রিত হয়েছি, আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।’

শমী কায়সার বলেন, ‘সকল সংস্কৃতি কর্মীরা আমরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা আবারো দাঁড়াবো এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্তরে সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেও কখনো ভাবিনি। আজকে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মহত। কারণ যে বাংলাদেশ টিলিভিশন বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছে- সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এখানে আমরা বেড়ে উঠেছি, শিল্পী হিসেবে এই প্রাঙ্গনে বড় হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের সকলের আমরা বিচার চাই। বাংলাদেশে এরকম নৃশংসতাা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এতো প্রাণহানী আমরা আর চাই না।’

আজিজুল হাকিম বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। আমি এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে সকল প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের সকলের বিদেহী আত্মার প্রতি আমি সমবেদনা জানাই, আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, সম্প্রতির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই, সন্ত্রাসের বাংলাদেশ চাই না। সবাই মিলে আসুন, দেশটাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। আর সন্ত্রাস আমাদের কাম্য নয়।’

সহিংসতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, হৃদি হক, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, নিপূণসহ উপস্থিত অনেক তারকাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.